বর্তমানে এনভাটোর (গ্রাফিকরিভার) সবচেয়ে এক্সাইটিং এবং আলোচ্য ফিচার হল অথোররা তাদের আইটেমের প্রাইস নিজেরাই সেট করতে পারবে। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে আনন্দের এবং খুবই প্রতিক্ষিত একটি ফিচার। স্বাভাবিকভাবেই আপনি চাইবেন আপনার ক্রিয়েটিভ প্রোডাক্টের প্রাইস আপনি নিজেই ঠিক করতে। আপনার পরিশ্রমের যথোপযুক্ত মূল্য অন্য কেউ কিভাবে বুঝবে?
এতদিন এটা এনভাটোর নিয়ন্ত্রনে ছিল তবুও খুব একটা অখুশি ছিল না কেউই। কারন ইচ্ছা করলে রিভিউয়ারদের মেইল করে রিকোয়েস্ট করলে তারা প্রাইস বাড়িয়ে দিত। কিন্তু বর্তমানে এটা অথোরদের নিয়ন্ত্রনে থাকায় নতুন অথোররা (এবং গুটিকয়েক পুরনো অথোরও) এটাকে অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করছে। যা মোটেই কাম্য নয় এবং তাতে মার্কেটের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
গতকালকে একটা পাওয়ারপয়েন্ট টেমপ্লেট দেখলাম ১৫ ডলার দামের, কিন্তু কোন সেল ছিলনা। আজকে দেখলাম সেটা ১০ ডলার হয়ে গেল এবং সেই সাথে ১টা সেলও পেল। সেলটা কি দাম কমিয়ে দেয়ার জন্য হয়েছে? আমার মনে হয় না, কারন গতকালই এটা অ্যাপ্রুভ হয়েছিল। ১৫ ডলার হিসেবে প্রোডাক্টটি খুবই দারুন ছিল, ৫ ডলার কমিয়ে দেয়াটা আমি কেন জানি মানতে পারছি না। আবার দেখা যাচ্ছে অনেকে ৬-৭ ডলারের প্রোডাক্টের প্রাইস রাখছেন ২ ডলার। আপনারা আসলে কি চান? সেল বেশি চান? প্রাইস কমিয়ে দিলে সেল বেশি হবে এই থিউরি কোথায় পেয়েছেন? অনেক আগে একবার কোন এক পত্রিকায় পড়েছিলাম যে বিশ্বে বহু মানুষ পেইন কিলার কেনার সময় কম-দামী পেইন কিলার বাদ দিয়ে বেশি-দামী পেইন কিলার কেনে এই বিশ্বাস করে যে, দামী পেইন কিলারটা নিশ্চয়ই ভাল কাজ করবে, দ্রুত পেইন দূর করবে। কিন্তু গবেষনায় দেখা গেছে বেশিরভাগ পেইন কিলারেরই কোন ওষুধি গুনাগুন নেই, ব্যথা আপনা-আপনিই ভাল হয়ে যায়।
যাই হোক, উদাহরনটা কনফিউজিং। আমি বুঝাতে চেয়েছি যে সবাই সস্তা জিনিস কেনে না। কোয়ালিটি প্রায় সময়ই মূখ্য ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। যুক্তিযুক্ত প্রাইসের চেয়ে কম প্রাইস সেট করলে বায়াররা সেই আইটেমের কোয়ালিটি নিয়ে সন্দেহে থাকবে। তবে হ্যা, ৬-৭ ডলারের (ইউজুয়ালি) একটা আইটেম আপনি ২ ডলারে দিলে প্রথম দিকে ধুমধাম করে বেশ কিছু সেল পেয়ে যেতে পারেন। প্রোডাক্টটি যারা কিনার কথা নয় তারাও দাম কম দেখে কিনেই ফেলবে হয়ত। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, আপনার প্রোডাক্ট কিনে ক্লায়েন্টরা যদি দেখে লো-কোয়ালিটি আইটেম, তাহলে ক্লায়েন্টরাও আপনার প্রোডাক্টটিকে লো-রেটিং দিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে না। নতুন ক্লায়েন্টরা প্রোডাক্ট কিনার সময় যখন দেখবে লো-রেটেড প্রোডাক্ট, তখন পানির দাম দিলেও প্রোডাক্ট কিনবে না। কষ্ট করে কামানো ডলার তারাও পানিতে ফেলতে চাইবে না। একটা ব্যাড রেটিং শুধুমাত্র একটা প্রোডাক্টের জন্য নয়, পুরো পোর্টফোলিও এবং প্রোফাইলের জন্য একটা কালো দাগ। সুতরাং লো প্রাইস সেট করে বোকামি করবেন না তথা নিজের কাজের গুরুত্ব কমাবেন না।
অবশ্যই, এরপরেও, এটাও ভাববেন না যে, দাম বাড়িয়ে দিলেই যে সেই প্রোডাক্ট হাই কোয়ালিটির হয়ে গেল তা নয় কিন্তু। দামী পেইন কিলারের গুনাগুন না থাকলেও ব্যথা আপনা আপনি ভাল হয়ে যায় কিন্তু দামী ডিজিটাল প্রোডাক্ট কিনে ব্যবহার করলে ক্লায়েন্টের চাহিদা নাও মিটতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও বেশি ধরা খাবেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত দাম ধরলে সেল এমনিতেও কমে যাবে কারন দামী জিনিসও সবাই কেনে না (হা হা হা)। আবার বেশি দামী প্রোডাক্ট মানে হাই কোয়ালিটি প্রোডাক্ট ভেবে কেনার পর লো-রেটিং দিতেই পারে, কেউ কেউ কোন রেটিং না করে ডিরেক্ট রিফান্ড চাইতে পারে। একজনের কাছে প্রোডাক্ট বিক্রি করে যে টাকাটা পেলেন সেই টাকা প্রোডাক্টের খারাপ কোয়ালিটির কারনে যদি ফিরিয়ে দিতে (সেল রিভার্সাল) হয়, এর থেকে কষ্টের কিছু নেই। তবে হ্যা, আপনি যদি ক্লায়েন্ট কে ফিচার/কোয়ালিটি দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারেন তাহলে কিছু ওভারপ্রাইসড প্রোডাক্টও ক্লায়েন্ট প্রয়োজনের তাগিদে কিনবে। তাছাড়া এসব প্রোডাক্টে রেটিং ভাল পাবেন। একটা টিপস দিতে পারি সেটা হল, প্রথমে প্রোডাক্টের যুক্তিযুক্ত প্রাইস সেট করুন। এরপর আস্তে আস্তে তাতে বিভিন্ন ফিচার দিয়ে বিভিন্ন ভার্সন বের করে প্রোডাক্টটিকে ফিচার-রিচ করে আপডেট করুন এবং একটু একটু করে দাম বাড়ান। প্রত্যেকবার বেশকিছু ফিচার এবং বাগ ইমপ্রুভমেন্টের জন্য অল্প কিছু ডলার বাড়াতে পারেন, তবে সেটাও যথোপযুক্ত হওয়া চাই।
আর কখনোই, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বার বার প্রাইস চেঞ্জ করবেন না, কখনোই না, কখনোই না।
আমার মতে, এই উল্টা-পাল্টা প্রাইসিং কমাতে রিভিউ প্রসেস আরেকটু হার্ড করা উচিত, তাতে করে অথোররা এত খাটা-খাটুনির পর কোয়ালিটি আইটেম দিয়ে দাম সহজে কমাতে চাইবে না, আবার সেল যাতে ভাল হয় সেজন্য প্রাইস বেশি সেট করতে চাইবে না। আর তাছাড়া প্রত্যেক ক্যাটেগরীতে আইটেমের জন্য মিনিমাম প্রাইস সেট করে দেয়া থাকলে আর লো-প্রাইসিং সমস্যা থাকবে না।
কি আর করা, আগামী কয়েক মাস হয়ত এই আকস্মিক পরিবর্তনের কারনে গ্রাফিকরিভারের অবস্থা একটু ভাল-খারাপ হতে পারে কিন্তু আপনি আপনার আইটেমের কোয়ালিটি ঠিক রেখে কাজ করে যান। আপনি আপনার মার্কেটিং করুন, দিন শেষে আপনিই জিতবেন। আপনি নিজে একজন ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্ট হলে কত দাম হলে আপনি এই আপনার প্রোডাক্টটি কিনতেন সেটা ভাবুন, হুট করেই প্রাইস সেট করবেন না, আইটেম বানাতে যেমন চিন্তা-ভাবনা করেন তেমনি আইটেমের প্রাইসও চিন্তা-ভাবনা করে সেট করুন। ইটস ইয়োর বিজনেস, ইউ শ্যুড নো অ্যাবাউট ইট ভেরি ওয়েল।